Place for Advertisement

Please Contact: spbjouralbd@gmail.com

সাক্ষাৎকারে রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক‘ঘরে আগুন দিয়ে সাঁওতাল উচ্ছেদ করতে পুলিশকে বলা হয়নি’

আমানুর রহমান রনি১২:৪২, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬ 
চিনিকলের এমডি (ডানে)
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ-বাগদা ইক্ষু খামারে ৬ নভেম্বর পুলিশ-আখ শ্রমিক ও সাঁওতালদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে তিন সাঁওতালের মৃত্যু হয়। আহত হয় পুলিশসহ ৩০ জন। এ ঘটনায় তিনটি মামলাও দায়ের করা হয়। এরই মধ্যে খামারের জমি থেকে সাঁওতাল  উচ্ছেদের একটি ভিডিও প্রকাশ হয়। যাতে সাঁওতালদের বাড়িতে পুলিশকে আগুন লাগাতে দেখা গেছে। এসব বিষয় নিয়েই শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) দুপুরে গাইবান্ধার মাহিমাগঞ্জের নিজ বাসভবনে বসে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা হয় রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আব্দুল আওয়ালের। চিনিকল, ভূমি, সাঁওতালদের উচ্ছেদ নিয়ে করা বিভিন্ন প্রশ্নের খোলামেলা উত্তর দিয়েছেন তিনি।
সাক্ষাৎকারে গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়ে তাদের উচ্ছেদ করার মতো অভিযান পুলিশের কাছে চাওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। এছাড়াও সংঘর্ষ, খামারের বর্তমান অবস্থা নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বিস্তারিত জানিয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আমানুর রহমান রনি।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনি তো ৬ নভেম্বর সংঘর্ষের সময় গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারে উপস্থিত ছিলেন। সেদিন কি ঘটেছিলো? এতো হতাহত ও সহিংসতার ঘটনা ঘটলো কেন?
আব্দুল আওয়াল: আমরা সকালে কয়েকজন কর্মকর্তা ও শ্রমিক নিয়ে আখ কাটার জন্য সেখানে যাই। খামারে আখ কাটার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় সাঁওতালরা বাধা দেয়। আমিসহ অন্য কর্মকর্তারা তখন তাদের বোঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তারা কোনও কথা শুনছিলো না। এরপর আমাদের শ্রমিকদের সঙ্গে সাঁওতালদের ধাক্কাধাক্কি হয়। আমাদের গাড়িগুলো সাঁওতালরা ভেঙে ফেলছিল। আমাদের সঙ্গে গোবিন্দগঞ্জ থানার কয়েকজন পুলিশ থাকলেও তাদের কোনও ভূমিকা না থাকায় আমি তাদের উপর নাখোশ হই। সাঁওতালদের বাধার মুখে আমি লোকজন নিয়ে খামার থেকে ১৫ গজ দূরে আসতেই পেছন থেকে তারা তীর মারা শুরু করেন। এতে আমাদের কয়েকজন শ্রমিক ও পুলিশ আহত হয়। পরে আমরা দ্রুত কাটারমোড়ে চলে যাই।
বাংলা ট্রিবিউন: তারপর কী হলো?
আব্দুল আওয়াল: আমরা কাটারমোড়ে অবস্থান করি। এরপর এলাকার লোকজন সেখানে জড়ো হতে শুরু করে। সেখানে থাকা অবস্থায় আহত পুলিশদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘণ্টাখানেক পর যখন এক থেকে দেড়হাজার লোক জড়ো হলো, তখন স্থানীয়রা নিজেরাই বলাবলি শুরু করলো, ‘আদিবাসীরা এতো সাহস পায় কোথায়? তারা পুলিশের ওপর হামলা করলো!’ তখন স্থানীয়রা সাঁওতালদের ধাওয়া দেয়। এসময় দেড়শতাধিক বা তারও বেশি সাঁওতাল খামারে ছিল। স্থানীয়দের ওপর তখন সাঁওতালরা আবার তীর ছোঁড়ে। এরপর স্থানীয়রাও পিছিয়ে চলে আসে। কারণ তীরের সামনে স্থানীয়দের কোনও প্রটেকশন ছিল না। এরকম দুই ঘণ্টা ধরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। যখন বেলা ২টা বাজে তখন স্থানীয়রা আবারও জড়ো হতে থাকেন।
বাংলা ট্রিবিউন: দুপুরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর সন্ধ্যায় ফের সংঘর্ষ হলো কেন?
আব্দুল আওয়াল: সকাল ও দুপুরে সংঘর্ষের পর সাঁওতাল ও স্থানীয়রা দুই পক্ষই মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। এরপর সন্ধ্যায় আবার সংঘর্ষ হয়।
বাংলা ট্রিবিউন: সন্ধ্যায় তো আসলে সংঘর্ষ হয়নি। ভিডিওতে দেখা গেছে পুলিশ ও সিভিলে থাকা লোকজন সাঁওতালদের বাড়ি-ঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। আপনি পুলিশের এমন অভিযান চেয়েছিলেন কিনা?
আব্দুল আওয়াল: না, আমার সঙ্গে সকালের পর পুলিশের কোনও যোগাযোগ হয়নি। দুপুরের পর থেকেই খামারের চারপাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার লোক জড়ো হচ্ছিল। সাঁওতালরা তখন অবরুদ্ধ ছিলো। এই পরিস্থিতি দেখে প্রশাসন ধারণা করেছে, হয়তো দুই পক্ষের সংঘর্ষে ব্যাপক প্রাণহানি ও রক্তপাত হতে পারে। তাই তারা ফোর্সের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। সাঁওতালরা অসংখ্য পুলিশ ও মানুষ দেখে খামারের বাড়ি-ঘর ছেড়ে পাশের গ্রামে (মাদারপুর ও জয়পুর) চলে যায়। সংঘাত এড়ানোর জন্যই মূলত ওপর মহলে কথা বলে ফোর্স বৃদ্ধি করা হয়েছিল। আর আতংঙ্ক থেকে সাঁওতালরাও নিরাপদে চলে যায়।
বাংলা ট্রিবিউন: তাহলে আগুনের ঘটনা ঘটলো কেন? আপনি কি পুলিশকে এমন কিছু নির্দেশ দিয়েছিলেন?
আব্দুল আওয়াল: আসলে আগুনের ঘটনা ঘটেছে রাতের অন্ধকারে। বহুলোক ওদের (সাঁওতাল) দ্বারা নিষ্পেষিত ছিলো, ক্ষুব্ধ ছিলো। তারই বহিঃপ্রকাশ আগুন।
বাংলা ট্রিবিউন: আগুন কে দিয়েছে? আপনি কি ভিডিও দেখেছেন, ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ ও সিভিলে থাকা দুজন ব্যক্তি সাঁওতালদের ঘরে আগুন দিচ্ছে। পুলিশ আগুন দিলো কেন?
আব্দুল আওয়াল: আসলে পুলিশ আগুন দিলো কেন, তার ব্যাখ্যা পুলিশ ভালো দিতে পারবে। আমি এমন অভিযান বা উচ্ছেদের কোনও নির্দেশনা দেইনি তাদের। আমরা আশা করিনি কখনও ওই জমি (খামারে সাঁওতালদের দখলে থাকা জমি) উদ্ধার হবে। আমরা ছয়মাস ধরে সাঁওতালদের সঙ্গে কথা বলেছি, আলোচনা করেছি। সাঁওতালদের ‘ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি’র সম্পাদক মো. শাহজাহানের সঙ্গেও আমরা কথা বলেছি। তবে তারা কোনও কথা শোনেনি।
বাংলা ট্রিবিউন: স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ছাড়াও পার্শ্ববর্তী এলাকার জনপ্রতিনিধিরা তাদের কর্মীদের নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছিলো। তাদের স্বার্থ কি এখানে? তাদের কি খামারের জমি লিজ নেওয়া আছে?
আব্দুল আওয়াল: না, তাদের কোনও জমি লিজ নেওয়া নাই। তবে হাইওয়ের পাশে কয়েকজন চেয়ারম্যানের জমি  রয়েছে, তারা আসছিলেন। পুলিশ আসলে উচ্ছেদ করতে ভয় পাচ্ছিল, কারণ উচ্ছেদে গেলেই ক্যাজুয়ালিটি ঘটতো। সাঁওতালরা নিজেরা তাদের এলাকাকে স্বাধীন রাজ্য ঘোষণা করেছিল। তাদের গ্রামের ওপর দিয়ে যাওয়ার রাস্তা রাতে তারা বন্ধ করে দিতো। অন্যান্য এলাকার মানুষ সেখান দিয়ে রাতে যেতে পারতো না।
বাংলা ট্রিবিউন: সাঁওতালরা খামারে কি পরিমাণ জমি দিয়েছিলো?
আব্দুল আওয়াল: আমি যতদূর শুনছি, ১ হাজার ৮৪২ একর জমির মধ্যে সাঁওতালদের কাছ থেকে ৫ থেকে ৮ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। কোনওক্রমেই তাদের জমি ১০ শতাংশের বেশি হবে না।
বাংলা ট্রিবিউন: সাঁওতালরা খামারে থাকা তাদের জমি ফেরত পাবে কিনা?
আব্দুল আওয়াল: সাঁওতালরা শুধু  না, এখানে বেশি জমি দিয়েছেন বাঙালিরা। অধিগ্রহণ হওয়া জমি কখনও ফেরত পাওয়া যায় না। গত জুলাইয়ে সাঁওতালরা খামারের জমি দখল করে। তাদের কেউ ইন্ধন দিয়ে এই কাজটি করিয়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে সাঁওতালদের জমি দেওয়ার কথা বলে এখানে জড়ো করা হয়েছে। তারা অনেক নিরীহ মানুষ। তারা এতো ঝামেলায় নেই। তাদেরই দেড় থেকে দুইশো মানুষ এই খামারেই কাজ করতো প্রতিদিন। সাঁওতালদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বলা হতো তাদের জমি দেওয়া হবে। টোপ দিয়ে তাদের আনা হয়েছে। এদের সঙ্গে এখন যারা যোগ দিয়েছে তারা ভূমিদস্যু।
বাংলা ট্রিবিউন: সাঁওতালদের দাবি, জমি অধিগ্রহণের শর্ত ভঙ্গ করেছে চিনিকল। এখানে আখ ছাড়াও অন্যান্য ফসল চাষাবাদ করা হয়। এই অভিযোগের সত্যতা কি?
আব্দুল আওয়াল: জমিতে আখ ছাড়া আর কোনও কিছু চাষ করা যাবে না, চুক্তিতে এমন কিছু লেখা নেই। কেউ দেখাতে পারবে না। বলা হয়েছে শুধু কৃষি খামারের জন্য এই জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র আখ চাষ করা যাবে এমন কোনও কথা নেই। তবে যদি উদ্দেশ্য ব্যহত হয়, তাহলে জমি সরকারের কাছে ফেরত দিতে হবে।
বাংলা ট্রিবিউন: খামারের জমির লিজের বিষয়টি কী?
আব্দুল আওয়াল: বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে লিজ দেওয়া হতো। যখন আখ চাষ না হয় তখন লিজ দেওয়া হয়। যে জমিতে আখ হতো না, সেই জমি বিভিন্ন মেয়াদে লিজ দেওয়া হতো। তবে বর্তমানে কোনও জমি লিজ দেওয়া হচ্ছে না।
বাংলা ট্রিবিউন: সাঁওতালদের জমি ফেরত দেওয়ার কোনও সুযোগ আছে কিনা?
আব্দুল আওয়াল: সরকার করপোরেশনকে এই জমি দিয়েছে। সরকার যদি আবার করপোরেশন থেকে জমি ফেরত নেয়, তা নিতে পারে। সরকারের জমি, করপোরেশনও সরকারের। সরকার যদি মনে করে ৫০০ বিঘা জমি তার দরকার অন্য কাজের জন্য, তাহলে তা সরকার নিতে পারেন। তবে সাঁওতালরা যে প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হচ্ছে, এই প্রক্রিয়াই তারা কখনও জমি পাবে না। ১৯৮২ সালের জমি অধিগ্রহণ আইনেও এই সুযোগ নেই।
বাংলা ট্রিবিউন: অভিযোগ রয়েছে চিনিকলের কর্মচারীরা সাঁওতালদের ঘর-বাড়িতে আগুন দিয়েছে।
আব্দুল আওয়াল: আসলে হাজার হাজার মানুষ সেখানে ছিল। আগুনের ঘটনায় আমার কোনও স্টাফ জড়িত কিনা তা আমি দেখিনি। খামার থেকে ঘটনাস্থল অনেক দূরে।
বাংলা ট্রিবিউন: সাঁওতালদের সঙ্গে এই বিরোধ নিরসনের উপায় কী?
আব্দুল আওয়াল: আসলে সমাধান সরকার করবে। সরকার ইতিমধ্যে গৃহহারাদের ঘর করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের তালিকা করা হচ্ছে, প্রকল্প চলছে। তবে একটি গ্রুপ সাঁওতালদের এই পথে আসতে দিচ্ছে না।
বাংলা ট্রিবিউন: আপনাকে ধন্যবাদ।
আব্দুল আওয়াল: বাংলা ট্রিবিউনকেও ধন্যবাদ।
http://www.banglatribune.com/national/news/166429/%E2%80%98%E0%A6%98%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%86%E0%A6%97%E0%A7%81%E0%A6%A8-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%93%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B2-%E0%A6%89%E0%A6%9A%E0%A7%8D%E0%A6%9B%E0%A7%87%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%85%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B0
Share on Google Plus

About spbjobsbank

0 comments:

Post a Comment